যে ১১টি পাওয়ার টুলস আপনার কর্মশালার কাজকে করবে সহজ

প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার ফলে, নতুন নতুন আধুনিক পাওয়ার টুলস বা সরঞ্জাম আমাদের কর্মশালার দৈনন্দিন কাজকে করেছে অনেক বেশী সহজ ও আরামদায়ক। যদিও সময়ের সাথে সাথে উন্নত দেশগুলোর মত আমাদের বাংলাদেশের মানুষরাও আধুনিক সব পাওয়ার টুলসের দিকেই ধাবিত হচ্ছে, যেগুলো খুব সহজেই ও দ্রুত কাঠ, ষ্টীল, গ্লাস ও সিরামিকের মত বস্তুকে নতুন অবকাঠামো বা রুপে পরিণীত করতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞদের মতে, এইসকল আধুনিক পাওয়ার টুলস কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অল্প সময়ে অধিক বেশী কার্য সম্পাদন করতে সাহায্য করে। এতে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনই দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ সুপরিচিত লাভ করছে। পাশপাশি, বর্তমানে ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য পাওয়ার টুলসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলুন দেখি, কয়েকটি জনপ্রিয় পাওয়ার টুলস যেগুলো আপনার রাখা উচিৎ ঃ 

১. ড্রিল মেশিনঃ  বারংবার যেসকল পাওয়ার টুলসগুলো ব্যবহার হয়, তাদের মধ্যে ড্রিল মেশিন অন্যতম।  কর্মশালার বিভিন্ন কাজ থেকে শুরু করে বাসার এমন কোন কাজ নেই যেখানে ড্রিল মেশিনের ব্যবহার নেই। তবে কাজ ভেদে ড্রিল মেশিনকে আমরা ৪ ভাগে ভাগ করতে পারি। 

  • বেবি ড্রিল বা ছোট আকারের ড্রিল মেশিনগুলো সাধারণত বাসা-বাড়িতে ব্যক্তিগত ছোটখাট কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ কাঠ বা লোহার সিটে স্ক্রু লাগানো ইত্যাদি।
  • নরমাল হ্যামার ড্রিল মেশিনগুলো সাধারণত বাসাবাড়িতে কাজের জন্য বিখ্যাত। কারন বাসাবাড়িতে যেহেতু বেশী ভারী কাজ করা হয়না তাই হ্যামার ড্রিল মেশিনে ৬.৫ সাইজের একটা বিট লাগিয়ে মশারি বা পর্দা লাগানোর জন্য দেয়ালে হুক, কিংবা দেয়ালে ঘড়ি বসানোর জন্য স্ক্রু লাগানসহ যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে পারে।   
  • প্রফেশনাল ও ভারী কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে হ্যামার ড্রিল মেশিন। এই মেশিনগুলো সাধারণত পিলার বা কংক্রিটের ছাদ ও দেয়ালে ছিদ্র করার মত ভারী কাজে ব্যবহৃত হয়। 
  • কডলেস বা ব্যাটারি চালিত ড্রিল মেশিনগুলো সাধারণত কাঠে ও দেয়ালের স্ক্রু লাগানোর মত কাজে ব্যবহার করা হয়।  

২. সার্কুলার সো ঃ কাঠ ফ্রেমিং, প্লাইউড, পাইপ কিংবা ষ্টীলের মত যেকোন জিনিষ নিখুঁত ও দ্রুতভাবে কাটার কাজে আজকাল সার্কুলার সো এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন এক সময় ছিল যখন মানুষ সার্কুলার সো (Circular Saw) এর মত আধুনিক সব পাওয়ার টুলসের ব্যবহার সম্পর্কে জানতেন না। তবে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে সময়ের সাথে সাথে এখন সার্কুলার সো এর ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সো এর ধরনের উপর ভিক্তি করে নিমক্ত জিনিষগুলো কাটা যায়ঃ   

  • কাঠ
  • প্লাস্টিক
  • লোহা 

৩। এঙ্গেল গ্রাইন্ডার ঃ গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কন্সট্রাকশন শিল্পের অগ্রগতি বেশ লক্ষণীয়। এসকল কন্সট্রাকশন কাজে এঙ্গেল গ্রাইন্ডারের ব্যবহারও চোখে পড়ার মত। টাইলস, মার্বেল, সিরামিক, পাইপ কাটিং বা ফ্লোর, কাঠ ও  ষ্টীলের পলিশিং বা গ্রাইন্ডিং এর কাজে  এঙ্গেল গ্রাইন্ডার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কাজের ধরনের উপর ভিক্তি করে এঙ্গেল গ্রাইন্ডারে বিভিন্ন ধরনের ব্লেড বা চাকা ব্যবহার করা যায়। 

৪। ইমপ্যাক্ট রেঞ্চ ঃ  অটোমটিভ ইন্ডাস্ট্রিতে ইমপ্যাক্ট রেঞ্চের ব্যবহার ও চাহিদা অপরিসীম । এক্ষেত্রে গাড়ির টায়ার পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে দ্রুত ও সহজে নাটগুলো খুলা ও লাগানোর কাজে দেশ-বিদেশে ইমপ্যাক্ট রেঞ্চের জনপ্রিয়তা রয়েছে ব্যাপক। শুধু তাই নয়, ইমপ্যাক্ট রেঞ্চ ব্যবহার করে ষ্টীল বা কাঠের উপর পুরাতন ও জং ধরা যেকোন নাট খুব সহজেই নিমিষেই খোলা বা লাগানো সম্ভব। তবে প্রয়োজন ও ব্যবহারের উপর ভিক্তি করে ইমপ্যাক্ট রেঞ্চ (Impact Wrench) ২ ভাগে ভাগ করা যায়ঃ ১। কর্ডলেস ইমপ্যাক্ট রেঞ্চ ২। কর্ডেড ইমপ্যাক্ট রেঞ্চ

কর্ডেড ইমপ্যাক্ট রেঞ্চ এর সুবিধা ঃ 

  • সহজেই যেকোন জায়গায় বহন করা সম্ভব। 
  • ভাল স্পীড এবং Torque কন্ট্রোল 

কর্ডলেস ইমপ্যাক্ট রেঞ্চ এর সুবিধা ঃ 

  • অত্যন্ত পোর্টেবল।
  • টাইট স্পেসে কাজ করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মেশিন 

৫। ইমপ্যাক্ট ড্রাইভার ঃ ইমপ্যাক্ট রেঞ্চ ও ইমপ্যাক্ট ড্রাইভার ২টা টুলস দেখেতে অনেকটা এক মনে হলেও, ইমপ্যাক্ট ড্রাইভার মুলত কাঠে, মেটাল বা ষ্টীলের বস্তু,  দেয়ালে বা প্লাইউডে স্ক্রু লাগানো বা খোলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি, আপনার কাজের ধরন ও প্রয়োজনের উপর ভিক্তি করে ইমপ্যাক্ট ড্রাইভার কাঠে, মেটাল বস্তু, দেয়ালে বা প্লাইউডে ছিদ্র করার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।   

৬। রেসিপ্রোকেটিং সো ঃ  কাঠ, প্লাইউড, মেটাল কিংবা পিভিসি পাইপ কাটার ক্ষেত্রে রেসিপ্রোকেটিং সো এর ব্যবহার লক্ষণীয়। বিশেষত, কাঠের তৈরি বিভিন্ন ফার্নিচার তৈরিতে  এবং কন্সট্রাকশন কাজে রেসিপ্রোকেটিং সো ব্যবহার করা হয়। কাঠ, মেটাল কিংবা পিভিসি এর ঘনত্বের উপর নির্ভর করে সো ব্লেড পরিবর্তন করা যেতে পারে।   

৭। ডাস্ট ব্লোয়ার ঃ পিসি, এয়ার কন্ডিশনার বা সূক্ষ্ম কোন যন্ত্রাংশের ভিতরে জমে থাকাময়লা বা ধুলোবালি পরিষ্কার করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। অনেক সময় এটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজও বটে, কারন এসকল যন্ত্রাংশে ভিতরের অংশে হাত দিয়ে পরিষ্কার করলে বিভিন্ন ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি হতে পারে। তাই ঝুঁকি এড়াতে ডাস্ট ব্লোয়ার ব্যবহার করাটাই সর্বোত্তম পন্থা। 

৮। ইলেকট্রিক চেইন সো ঃ কোন এক সময় ছিল, যখন মানুষ পেট্রোল চেইন সো ব্যবহার করত। তবে সময়ের সাথে সাথে মানুষ এখন ইলেকট্রিক চেইন সো ক্রয়েই বেশী আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। এর কারন হোল, ইলেকট্রিক চেইন সো ওজনে হালকা, কম শব্দ দূষণ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে চালু করা সম্ভব। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই ধরনের চেইনসোগুলো মুলত গাছের গুড়ি কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।  

৯। ওয়েল্ডিং মেশিন ঃ  মেটাল বা ষ্টীলের কোনকিছু জোড়া লাগানোর জন্য ওয়েল্ডিং মেশিনের ব্যবহার বাংলাদেশে অতি পুরানো। যেটা আমাদের দেশে “ঝালাই মেশিন” নামেও পরিচিত। তবে সময়ের সাথে সাথে দেশের আমদানি খাত সচল হওয়ার কারনে, বর্তমানে বহি বিশ্বের সব আধুনিক ও উন্নতমানের ওয়েল্ডিং মেশিনের সরবরাহ রয়েছে বাংলাদেশে। যেগুলো দামে সাশ্রয়ী এবং অনেক বেশী কার্যকরী।  

১০। জিগ সো ঃ কাঠ ও মেটাল বস্তু একটি নির্দিষ্ট বক্ররেখা বা আকৃতিতে কাটার জন্য জিগ সো মেশিন ব্যবহৃত  হয়ে থাকে।  মুলত কাঠ বা মেটাল বস্তু দিয়ে ফার্নিচার ও শৌখিন পণ্য তৈরিতে জিগ সো এর ব্যবহার রয়েছে। জিগ সো মেশিনে সাধারণত ২ ধরনের ব্লেড ব্যবহার করা যায়। একটি কাঠ কাটার জন্য ব্লেড এবং আরেকটি মেটাল বস্তু কাটার ব্লেড। 

১১। হ্যান্ডিক্র্যাফট ইলেকট্রিক গ্রাইন্ডার ঃ  কাঠকে খোদাই করার মাধ্যমে, কাঠের উপর নানাধরনের আকর্ষণীয় নকশা বা কাঠের শৌখিন পণ্য তৈরিতে ইলেকট্রিক গ্রাইন্ডার ব্যবহার হয়ে থাকে। ব্যবসায় বা ব্যক্তিগত যেকোন কাজেই হ্যান্ডিক্র্যাফট ইলেকট্রিক গ্রাইন্ডার ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। এর কারন, ইলেকট্রিক গ্রাইন্ডার মেশিনটি আকারে ছোট, ওজনে হালকা এবং খুব সহজেই ধরে কাঠের উপর খোদাই করে বিভিন্ন বাহারি ডিজাইন ও নকশা ফুটিয়ে তোলা যায়। পাশপাশি, ছোট আকারের কাঠ, লোহা ও ষ্টীলের বিভিন্ন বস্তু পলিশিং করার কাজেও এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *